পেত্রভানিয়ার দিনগুলি ঃ চতুর্থ খন্ড (চিঠি – ৯)

প্রিয় জয়ন্তী,

ট্রেনটা একটানা চলছেই। সকালের সূর্যটা এখনো নিস্তেজ হয়ে পূব আকাশে আলো ছড়াচ্ছে। পাইন গাছের গুড়ি গুলির ফাঁক গলে মাঝে মাঝে সুর্যের আলো ঝলকানি দিয়ে যাচ্ছে। শুভ্র তুষারে ঢাকা সবগুলি গাছ। এখানে ভূমি বেশ অসমতল। আমরা উত্তর পশ্চিমের অসমতল পাহাড়ি অঞ্চলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। এক ঝাঁক বাদামী চুলের গোছা আমার বুক আর মুখের একটা পাশ ঢেকে রেখেছে। তোমার ঘুম হচ্ছেনা ঠিক মত। একটু পর পর জেগে গিয়ে আবার ঘুমিয়ে যাচ্ছ। আমার বেশ ভালো ঘুম হয়েছে। আমি একবার ঘুমিয়ে গেলে আর জাগার উপায় নেই। রাতে ঘুমের মাঝে একবার পাশ ফিরে দেখে ছিলাম তোমাকে বই পড়তে। তখন কয়টা বেজেছিল বলতে পারব না। আমি একেবারে সকালেই উঠেই গেছি। যত পশ্চিমে যাচ্ছি বরফের প্রকোপ তত কমে যাচ্ছে। আমি আমার মোবাইলে কিছু খবর পড়ার চেষ্টা করছি। গত রাতে ১২ টায় আমরা এই নর্দান এক্সপ্রেস লাইনে উঠেছি। উত্তরের এই দীর্ঘ রেললাইন এগিয়ে গেছে পশ্চিমের মন্ডগ্রুসে। আমরা আর ঘন্টা তিনেক পরেই মন্ডগ্রুস নেমে যাব। মন্ডগ্রুস থেকে আমাদের দ্বিতীয় পর্বের ট্রেন যাত্রা শুরু হবে একটা কানেক্টিং রেলে। প্রায় ৬ ঘন্টার যাত্রা। অনেক দীর্ঘ একঘেয়ে যাত্রা। ট্রেনে আমাদের শেষ গন্তব্য লুইস পার্ক সিটি। এখানেই যাত্রা শেষ নয়! লুইস পার্ক থেকে আরেকটি কানেক্টিং বাসে প্রায় ৪ ঘন্টায় আমরা পঁৌছব লেক ভার্নায়। ক্রোয়েশিয়ার নীল সমুদ্র সৈকতের শহর। শেষ পর্যন্ত এই যাত্রা পথের ক্লান্তি আর একঘেয়েমি কোথায় যেয়ে পৌঁছে সেটাই আমাকে এই মুহুর্তে ভাবিয়ে তুলছে। তবে এই এক্সপ্রেস ট্রেনে সময় কাটনোর বেশ কিছু ভালো ব্যবস্থা আছে। এখানে একটা ওয়াচ ডেক কম্পার্টমেন্ট আছে। ওখানে বসে বাইরের প্রকৃতি দেখে সময় কাটানো যাবে। আরেকটা কম্পার্টমেন্ট আছে যেখানে ধুমপানের সুন্দর ব্যবস্থা আছে সাতেহ আছে মিনি বার। ছোট বাঙ্কারে শুয়ে থাকতে থাকতে কান্তি এসে যাচ্ছে তবু আমি উঠতেও পারছি না। আমি নড়া চড়া করলেই তোমার ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমি ব্ল্যাংকেট টেনে নিয়ে উপর হয়ে কিছুক্ষণ মোবাইলে গেইম খেলে নেই বরং। উপুড় হতেই আবার জানালায় চোখ পরে যায়। বাইরে অভাবনীয় সুন্দর এক দৃশ্য। ট্রেন ছুটে যাচ্ছে একটা ভ্যালির কোল ঘেঁষে। ভ্যালি সাদা তুষারের চাদরে ঢাকা। অনেক দূরে পাহাড়ের সারি। স‍ূর্য তার সর্বোচ্চ উজ্জলতা নিয়ে চারপাশ আলোকিত করে রেখেছে এখানে। এই অসাধারন দৃশ্য না দেখে ঘুমিয়ে থাকা একটা বোকামির চূড়ান্ত। “জানালার বাইরে দেখো জয়া” বলতেই প্রথমে খুব আলসেমিতে এক চোখ খুলে ধড়মড় করে উঠে পড়ে বললে “কি অদ্ভুত সুন্দর! আমাকে আগে জাগাওনি কেন?”

সেন্ট্রাল ইকনোমিক্স সেন্টারে পরিচয় হয়েছিল তোমার বন্ধু আহমেদ সাগওয়াদ এর সাথে। যার প্রচন্ড আন্তরিক আমন্ত্রনে এই বিশেষ অবকাশ যাত্রা। প্রথম পরিচয়েই আহমেদ বেশ আন্তরিকতার ছাপ রেখে ছিল যেটা পরবর্তিতে আরো ঘনিষ্ঠতায় রুপান্তরিত হয়েছিল। হটাৎ একদিন আহমেদ তার শহরে যাওয়ার আমন্ত্রন জানালো, এটা ঠিক তখন যখন আমরা পেত্রভানিয়া ছেড়ে ছুটি কাটাতে বাইরে কোথাও যাওয়ার কথা ভাবছিলাম। আহমেদ যখন আমাকে তার শহরের ঠিকানা বলে, কেন জানি আমি অদ্ভুত চোখে চেয়ে থাকলাম আহমেদ এর দিকে। বহু দূরের পথ! কিন্তু লেক ভার্নার বর্ণনা শুনে আমরা দুজনই কেন জানি একরোখা এক সিধান্ত নিয়ে ফেললাম। ওখানেই যাচ্ছি শেষ পর্যন্ত আমরা। সাগওয়াদের দেয়া তথ্য অনুজাই এখান থেকে আমরা চাইলে ফ্লাইট না ধরে ট্রেনে করেই যেতে পারব এবং সেটাই নাকি অনেক উপভোগ্য আর রোমাঞ্চকর! প্রথমে পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে কিছুটা পাগলামি মনে হলেও আমরা দুজন দীর্ঘ সময় এই ট্রেন যাত্রা নিয়ে আলোচনা করি। উত্তরের সুবিস্তীর্ণ রেলপথের গল্প আমি শুনেছিলাম। অনেক প্রাচীন এই যোগাযোগের রুট আজও এই সর্বাধুনিক যোগাযোগের যুগে টিকে আছে কেন সেটাই একটা প্রশ্ন। আমরা দুজনই চাচ্ছিলাম নতুন কোনো অভিজ্ঞতার মাঝ দিয়ে যেতে যাতে আমাদের দুজনার সময়টা আরো গভীর ঘনিষ্টতায় কেটে যায়। সব কিছু ভেবে আমরা ট্রেনে যাত্রার অদ্ভুত সিধান্তটাই নিয়ে ফেলি। সাগওয়াদও যাচ্ছে আমাদের সাথে। এই বিশেষ ভ্রমণের সকল আয়োজন ও খুঁটিনাটি বিষয় সে দেখছে। আমি মোটামুটি তার উপরে দায়িত্বের বোঝা ছেড়ে দিয়ে বসে আছি।

সাগওয়াদ বোধহয় তার বার্থ কম্পার্টমেন্টে ঘুমুচ্ছে। আমি উপুড় হয়ে বালিশে শুয়ে জানালা দিয়ে বাইরে দেখছিলাম। আমার কাঁধের উপরে মাথা রেখে বাইরে তাকিয়ে থাকা তোমার এলোমেলো চুল গুলি আমার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা করে উড়ে যাচ্ছে এইদিক সেদিক।

প্রায় ১০ ঘন্টা যাত্রার পরে আমরা মন্টগ্রুসে এসে নামলাম। অনেক পুরোনো বিশাল একটা স্টেশন। কিছুটা টুকরো টুকরো ভীড়বাট্টা  চারিদিকে। কিন্তু তেমন অগোছালো মানুষের স্রোত নেই। আমাদের পরবর্তী ট্রেন এখান থেকেই ছাড়বে। আমাদের হাতে ৩৫ মিনিট সময় আছে। তোমার কি মনে আছে আমাদের এখানে কফি শপটার কথা? আমি কিছু পানীয় নেয়ার জন্য কফি শপটাতে ঢুকে জানলাম কফি শুধু মাত্র সকাল ১২টা পর্যন্ত পাওয়া যায়। আমরা অন্য পানীয় কিনতে পারি চাইলে! কফি কেন শুধুমাত্র ১২টা পর্যন্ত পাওয়া যাবে আমি তার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে যে উত্তরটি পেয়েছিলাম তা আরো কিম্ভুতকিমাকার। তাদের কাছে কফির যে বিন থাকে সেটা নাকি সকাল ১০টার আগেই শেষ হয়ে যায়। যদিও আমার কফি পানের কোনো ইচ্ছে নেই, তোমাদের জন্য খোঁজা আরকি। অগত্তা আমি ৩ বোতল লেমনেড চা (স্বাদ প্রায় অসাধারন) নিয়ে এসেছিলাম এবং অবশ্যই তোমার সেই মিষ্টি স্বাদের লেমন্ড চা ভালো লাগেনি। আমরা স্টেশনটা ঘুরে ঘুরে দেখি কিছুক্ষন। আমার আর সাগওয়াদের আগ্রহই বেশি। তুমি কিছুটা ক্লান্ত ছিলে। বার বার আমার হাত জড়িয়ে ধরে বলছিলে ঐখানটাতে বসি চল। প্রায় ৩০০ বছর আগের এই স্থাপনার মূল নকশা ও কারুকাজ আগের মত রেখেই অধুনিকায়ন ও পরিবর্ধন করেছে। কয়েটা জায়গায় দূর থেকেই চলাচল সংরক্ষিত করে দেয়া হয়েছে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে দেয়াল জোড়া খোদাই চিত্রকর্ম। সেন্ট্রাল ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের একেবারে মাঝা মাঝি জায়গায় হওয়াতে এই স্টেশনটার গুরুত্ব অনেক বেশি। মোটামুটি অনেক রুটেই ট্রেন যাচ্ছে এখান থেকে। লুইস পার্কের উদ্দেশ্যে আমারা আমাদের দ্বিতীয় পর্বের যাত্রা শুরু করলাম। ছুটে চলছে ট্রেন। এখানের প্রকৃতির রূপ অসাধারণ। আমরা ছুটে যাচ্ছি মাইলের পর মাইল খোলা ঘাসের মাঠ কিংবা ফুলের ক্ষেতের মাঝ দিয়ে। কখনো পেরিয়ে যাচ্ছি কান্ট্রি সাইড। হটাৎ করেই যেন ট্রেনতা কারো বারান্দায় বা সবজির ক্ষেতে ঢুকে পড়ছে। কেউ বারান্দায় অলস বসে নির্লিপ্ত চোখে একবার দেখে নিল ট্রেনটা। এভাবে হয়ত প্রতিদিনই ট্রেন যাচ্ছে তার লাগোয়া বারান্দা ঘেঁষে। শীতের প্রকোপ কমে আসছে ধীরে ধীরে। এখান থেকে আমরা দক্ষিন দিকে যাত্রা করব আরো উষ্ণ অঞ্চলের দিকে। আমার আর সাগওয়াদের ক্ষুধা পেয়েছিল। আমরা গেলাম রেস্তোরা কম্পার্টমেন্ট খুঁজে বের করতে। এটা সাগওয়াদের তৃতীয়বারের মত এই পথে বাড়ি ফেরা। তার এই দীর্ঘ যাত্রা নাকি বেশ ভালই লাগে! সাগওয়াদ তেমন আড্ডাবাজ নয় বরং সে কিছুটা চুপ চাপ। আমি কিছুটা আড্ডা জমিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সে বেশ সাবলীল ও সহযোগিতা প্রবন মানুষ। সে আমাকে বলেছিল তার প্রেমিকা তার শহর ভার্নাতেই থাকে। তার প্রেমিকার নাম শামসী জোয়ানা। আমাদের কথা জোয়ানাকে জানানোর পরে সে আমাদের জন্য একদিন ডিনারের ব্যবস্থা করেছে তার বাসায়।

Morning আগে থেকেই আমরা ভার্নায় হোটেল বুক করে রেখে ছিলাম পেত্রভানিয়া থেকে। বাসটা যখন আমাদের প্রায় অন্ধকার রাস্তায় পাশে একটা ল্যাম্প পোস্টের নিচে নামিয়ে দিচ্ছিল তখন খেয়াল করলাম সামনে ছোট্ট একটা সাইন বোর্ড ঝুলানো “ক্রিস্টোফার ইন”। ঠিক তখন কল্পনাও করতে পারিনি যে আগামীকাল সকালে কি অসাধারন এক ভোরে আমাদের ঘুম ভাঙ্গবে সমুদ্রের উপকন্ঠে চমৎকার ছোট গ্রামে। হোটেল সর্বসাকুল্যে তিনতলা। একজন বয়স্ক লোক এত রাতে আমাদের কে অভর্থনা জানালো। সাগওয়াদ আমাদের সাথে হোটেলেই থাকছে আজ। রাতে এখানে আর কোন ট্রান্সপোর্ট নেই। তার বাড়ি এখান থেকে খানিকটা দূরে। আগামীকাল সকালে সে তার ঘরে ফিরবে। সমুদ্রের একটা ঠান্ডা নোনা বাতাস সব ক্লান্তি মুছে দিয়ে গেল হটাৎ। রাতে খাবারের ব্যবস্থা করা ছিল, কিন্তু আমরা তেমন কিছুই খেলাম না। আমি রুমে ঢুকে কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই। আমার সকালে ঘুম ভাঙ্গে সাড়ে নয়টার দিকে। জার্নির ধকল তখন কাটেনি। ক্লান্তিতে আমি বালিশের মাঝে ডুবে আছি। সামান্য ঠান্ডা পরিবেশ। তুমি তখনও ঘুমিয়ে। বিশালাকার জানালাগুলির পাতলা পর্দার ফাঁক গলে সকালের সূর্য্য পুরো ঘর ভরিয়ে দিচ্ছে একটা নরম আলোয়। আমি বালিশে মাথা ডুবিয়ে ভাবছিলাম ঠিক এই মুহুর্তে আমার কি করা উচিত। লিলেনটা একটু টেনে দিয়ে তোমার গায়ে আমি উঠে বসলাম। মোবাইলে চার্জ নেই। নেটওয়ার্ক এর কি অবস্থা জানা গেল না। আমি একটু পায়চারী করতে বেরুলাম। হোটেল থেকে বের হতেই একটা অসামান্য দৃশ্য আমার দৃষ্টি আটকে দিল। আমাদের মনের সব ভাব সঠিক ভাবে প্রকাশের সব ভাষা আমার জানা নেই। তাই এই অসামান্য দৃশ্যের বর্ণনাও আমি এই চিঠিতে ফুটিয়ে তুলতে পারব না। তাবুও খুব সংক্ষেপে বলি। আমি হোটেলের বাইরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। রাস্তার ওপাশ থেকেই একটা ঢাল নেমে গেছে একটু দুরে সমদ্রের তটে। বিস্তৃত এই সবুজ ঘাসের চাপড়ে মোড়ানো ঢালে কোথাও দু-একটা ছোট বড় গাছ দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টির সীমা যতদুর যায় ততদূর এভাবেই চলে গেছে। আরো দুরে কয়েকটা কটেজ। আর সামনে দিগন্ত বিস্তৃত শান্ত নীল সাগর। রাতে এই গুলির কোনো কিছুই আন্দাজ করতে পারিনি। আমার মাথায় আরেকটা ব্যাপার ঘুরছে! সব ঠিক আছে কিন্তু এই অসাধারন দৃশ্য ২-১ দিনের মধ্যে পুরানো হয়ে যাবে। তখন আমরা দুজন এই জনমানবহীন সমুদ্রের পাড়ে কি করব? মাথার ভেতর পরিকল্পনা সাজানো ছাড়া এখন আর কোনো উপায় নেই। কয়েকটা তথ্য জেনে নিতে হবে তার মাঝে উল্লেখ যোগ্য হল:
১. আমাদের একটা ছোট গাড়ি দরকার হবে এই কয়েকদিনের জন্য
২. কাছকাছি লোকালয় ও রেস্টুরেন্ট  কত দূরে?
হোটেল ম্যানেজারের কাছে জিগ্গেস করলেই তথ্য পাওয়া যাবে হয়ত। নিরুত্তাপ সকালের রোদে আমি কিচ্ছুক্ষন বসে থাকি। জীবন এখানে থমকে গছে যেন। কোনো তাড়া নেই নেই কোনো তাড়না।

ভার্নায় আমরা প্রায় পাঁচ দিনের মত ছিলাম। অনেকটাই আধুনিকতার ছাপ বিবর্জিত কোলাহল মুক্ত এক টুকরো সমদ্র পাড়ের এলাকা। এখানে সময় কাটানোর মত বেশ কিছু জায়গাও পরে আমরা পেয়েছিলাম। প্রকৃতি এখানে অফুরন্ত উদার সৌকর্য সাজিয়ে বসে আছে। আমরা সার্ফার বে তে প্রায় প্রতিদিনই সার্ফিং করতাম। আমার কাছে আনকোড়া হলেও তুমি বেশ দুর্দান্ত সর্ফিং-এ । পর্যটকের আনাগোনা তেমন চোখে পড়েনি। আমাদের প্রতিদিনের ঘোড়া ঘুড়ির তালিকায় ছিল বিকেলে সাগওয়াদ ও জোয়ানার সাথে ঘুড়ে বেড়ানো। প্রায় অনেক অনেক রাত অব্দি আমরা আড্ডা দিতাম সাগাওয়াদের বাসায়। আমার মনে আছে একদিন  অনেক রাতে হোটেলে ফেরার সময় গাড়িতেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলে তুমি। একদিন আমরা ঘুড়তে গিয়েছিলাম সাগওয়াদের ছেলেবেলার হাই স্কুলের ডর্মে। আর একদিন আমরা গিয়েছিলাম এখান থেকে অনেক দূরে লেইনহিল ফরেস্টে। ভার্নায় আমার সব থেকে বড় পাওয়া হলো সাগওয়াদ ও তার বান্ধুবী শামসী জোয়ানার মত চমৎকার মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া। আমাদের উল্লেখযোগ্য বন্ধুদের মাঝে আজও  আমরা যাদেরকে ভুলতে পারিনি। অনেক দূর থেকেও আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হয় আজও। আমরা দু’জন অনেকবার ভেবেছিলাম সাগওয়াদ ও শামসীকে দেখতে ভার্নায় যাব। আজও যাওয়া হয়ে উঠেনি।

বাল্টিকের তীরে ঝিমিয়ে পড়া সূর্যটা ক্লান্ত হয়ে পশ্চিমের আকাশে লাল রং এঁকে নিভে গেছে। আমি সহজেই তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম “আমাদের গন্তব্য কোথায়?” তুমি কিছুক্ষণ কি যেন ভেবে বলেছিলে “আমাদের কোনো গন্তব্য নেই, আমরা পথের শেষটায় এসেই মিলেছি। আমাদের দু’জনার গন্তব্যও এখানটায় এসে শেষ হয়ে গেছে”। এলোমেলো বাতাস থেমে থেমে বয়ে যাচ্ছে হালকা ঠান্ডার পরশ মেখে। জনমানবহীন এই বালুকাবেলায় এসে নিঃশিম সাগরের ডেউ গুলি তাদের গন্তব্য হারিয়ে আছড়ে পড়ছে। ঠিক যেমন আমরা দুজন আমাদের এই এক জীবনের সব অজানাকে সামনে মেলে হাতে হাত রেখে আরেক জীবনের গল্প লিখে যাচ্ছি।

*সংযুক্তি : পেত্রভানিয়ার দিনগুলি ঃ প্রথম খন্ড

পেত্রভানিয়ার দিনগুলি ঃ দ্বিতীয় খন্ড

পেত্রভানিয়ার দিনগুলি ঃ তৃতীয় খন্ড

Share your thoughts