নিস্তব্ধ ঘুমে (চিঠি – ১)

প্রিয় জয়ন্তী,

এইসব বর্ষার কোনো এক দিনে কথা যখন তুমি বর্ষার মাঝ রাত গুলিতে রেস্ট পোর্চের লং শেড খুলে দিয়ে ঘুমিয়ে যেতে। সকাল হত আমার নাক বন্ধ হাঁচির মধ্য দিয়ে। আজ ঘুম ভেঙ্গেছে নাক বন্ধ হাঁচির সাথে। শির শিরে ঠান্ডা বাতাস সারা ঘর জুড়ে। তোমার দিকে ফিরে দেখি তখনও তুমি শ্বেত সারসের ডানায় নিস্তব্ধ ঘুমে। বন্ধ নাক আর কিছুটা বিরক্তি নিয়ে খুলে রাখা লং শেডের ফাঁক গলে বাইরে তাকাই। অনেক দূরে সারা রাত বৃষ্টিতে ভেজা পাইন গাছ গুলি কেমন যেন ভাবলেশহীন দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভাবতে থাকি পাইন গাছ গুলির নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে কোনো ঝামেলা নেইত আবার? গতকাল রাতের কথা ভাবতে থাকি হটাৎ! আমরা অনেকটা রাত পার করেছিলাম মুভি দেখে। লাইব্রেরিতে আমি যে কখন ঘুমিয়ে পরেছিলাম! মুভির কোথায় জানি হঠাৎ তোমার তীব্র রোমাঞ্চ আমাকে নেহায়াত নির্দয় ভাবে ঘুম থেকে তুলে ফেলল। আমি ভেবেছিলাম মুভিটা সময় করে আরেকবার দেখব। আমি যে লুকিয়ে ঘুমিয়ে গেছি, ব‍্যাপারটা শেষমেষ তুমি ধরে ফেলেছো। আর যথা রীতি আমাকে এক গাদা উপহাস-পরিহাস  সহযোগে বিছানায় আশ্রয় নিতে পাঠানো হলো। যদিও তখন আমি নিপাট ভালোমানুষ এর মত মুভি দেখায় আগ্রহ দেখিয়ে যাচ্ছি।

হটাৎ মনে হলো আজ কি বার? আমার অবশ‍্য দিন তারিখের ভাবনা নেই, বন্ধ ছুটির ভাবনা নেই। সেই হিসেবে তোমার ছুটির দিনই আমার অঘোষিত হলিডে। তোমার হলিডে শুরু হলেই আমার মনে একটা বিচিত্র ছুটির আনন্দ ভর করে। আজকি সে রকমই কোনো দিন কিনা ভাবা উচিৎ। আমি বেড রেস্ট এর মনিটর অন করি, ভেসে ওঠে আজ সোমবার। হটাৎ আমার সকল ছুটির আনন্দ মাটি হয়ে যায়, আজকে যে কোনভাবেই শুক্র -শনিবার না। তারপরেও মনে ক্ষীন আশা জাগিয়ে রাখি। আজ হয়তো তোমার অফিস কামাই এর দিন। যদিও এমন নাক বন্ধ করা হাঁচি ভরা ঠন্ডা লাগা দিনে অফিস না যাওয়াটাই নিয়ম। আর তোমাকেও সেটা অন্তত আমাকে দেখে বোঝা উচিত। এইসব জল্পনা কল্পনার কোনো এক ফাঁকে আমি আবার স্লিপ কভার এর নিচে ঢুকে যাই। লং শেডটা তখন খোলা। বাইরের ভেজা ঠান্ডা বাতাস হুহু করে আসছে। মেঘ রঙ্গা সকালের মৃদু আলো ঘুম খোঁজা চোখ গুলিকে আর নিষ্প্রভ করে তুলছে।  স্লিপ কভার এ ঢুকে যেতেই একটা পরিচিত উষ্ণ হাতের বন্ধনে ডুবে যেতে যেতে ভাবতে থাকি আবারও জেগে ওঠার কি কারণ থাকবে? বেঁচে থাকার জন্য কখনো হয়ত আমাকে কোনো নিশ্চয়তার নিশ্চিত ও পরীক্ষিত স্থান খুঁজে নিতে হবে। আমি জয়ন্তিকে খুঁজে নিয়েছিলাম পরম নিশ্চয়তায় পরম ভালবাসার। কি যেন এক অহেতুক ভাবনা আমাকে প্রবোধ দিতে শেখায় আমি আবারো জেগে উঠবো। তখনও আমার মুখের উপরে ঝুঁকে থাকবে একটা চির চেনা মায়া ভরা হাসি ভরা মুখ।

*এই চিঠি গুলি হটাৎ করেই শেষ হয়ে যায়। অনেক কথা থেকে যাচ্ছে, না বলা, তাই হয়তো তোমাকে কখনো ইতি সম্বোধন করাও হবে না

2 Comments

Join the discussion and tell us your opinion.

Nazmus Sakibreply
August 18, 2012 at 11:25 pm

ইতি বলাটা হয়ে উঠে না, সকালের মিঠেকড়া রোদ এসে রাত কে ইতি বলে দেয় কিন্তু উষ্ণ ঘুমের আড়ালে আড়মোড়া ভাঙ্গা আমাদের সকাল গুলো জয়ন্তীর কাছে না বলা কথাই থেকে যায় ।

এভাবেই জীবন বয়ে যায়, শূণ্যতায় শুরু শূণ্যতায় পরিণতি, মাঝে কিছু আলোছায়া আর আড়মোড়া ভাঙ্গা সকালে চায়ের চুমুক বয়স্ক পৃথিবীর স্মৃতিতে ছাপ রেখে যায় মহাকালের নাম করে ।

জয়ন্তী কিংবা জয়িতা ভালো থাকুক । আর ভাল থাকুক আমাদের একান্ত ভোরগুলো ।

info@riverinkart.comreply
August 18, 2012 at 11:54 pm
– In reply to: Nazmus Sakib

শূণ্যতায় শুরু শূণ্যতায় পরিণতি ……

Leave a reply